শনিবার, ৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফিরে দেখা রাজনীতি

 

 


মোঃ খায়রুল কবির (আবাদ )


মকিমাবাদ মিয়া বাড়ি ছিল রাজনৈতিক জন কল্যাণ মূখি। একই পরিবার ও বাড়ির আপন নানা মরহুম আমিন মিয়া ছিলেন হাজিগঞ্জ ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট ( ব্রিটিশ সময়) ২২ বছর। বড় মামা সাত্তার মিয়া ছিলেন হাজিগঞ্জ আওয়ামী লীগের সভাপতি ( ঐতিহাসিক গোল দরজা বিশিষ্ট বাজারের ঘরে বসতেন)। জেল যেতে হয়। মেজ মামা আবদুর মান্নান মিয়া(হেডমাস্টার) শিক্ষাবিদ প্রগতিশীল রাজনীতির ধারক যুক্তফ্রন্টের সময় এবং স্বাধীনতা পরবর্তী নির্বাচন করেন। বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় ভুমিকা রাখেন। ছোট মামা মরহুম আবদুর রব ভাষা আন্দোলন থেকে রাজনীতির সাথে যুক্ত। আওয়ামী লীগ ( জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত). আমার বাবা চাচা ও মিয়া পরিবারের অন্য কেউ সরাসরি রাজনীতির সাথে জড়িত না থাকলেও প্রগতিশীল চিন্তাভাবনার ছিলেন। তাই ছোট কাল থেকেই রাজনৈতিক আবহাওয়ায় বেড়ে উঠা।

১৯৬৫ সালে যখন হাজীগঞ্জ হাই স্কুলে ক্লাশ ফাইভে পড়তাম তখন ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের শাসন। মুসলিম লীগ ক্ষমতাসীন, এলাকার অধিক প্রভাবশালী পরিবার মুসলিমলীগ করতেন।


চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের রাজনীতি 


ঐ সময়ের একটি ঘটনা উল্লেখ করা প্রয়োজন। হাজীগঞ্জ হাই স্কুল যা বর্তমানে সরকারি পাইলট মডেল স্কুল এন্ড কলেজ নামে পরিচিত। সেই ১৯৬৫ সালে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হয়েছিলেন একজন অশিক্ষিত মুসলিমলীগ নেতা । যার প্রতিবাদে এলাকায় আন্দোলিত হয়ে উঠে, ছাত্রছাত্রীরা মূর্খ সভাপতি চান না তাই বিক্ষোভ, মিছিল ইত্যাদি কারনে এলাকা জ্বলে উঠে।

ততকালীন প্রগতিশীল রাজনীতির বাহক, এক সময়ের যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী এবং প্রধান শিক্ষক আবদুল মান্নান মিয়া বি. এ. বি. টি. স্কুল ছেড়ে সাথে প্রচুর শিক্ষার্থী নিয়ে এসে মকিমাবাদ গ্রামের রেল স্টেশন সংলগ্ন জুনিয়র মাদ্রাসায় আমিন মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয় নামে একটি স্কুল চালু করেন।যা ১৯৬৭ সাল থেকে অনুমোদন পেয়ে কাগজ কলমে যাত্রা শুরু করে। আমিও একজন হিসাবে হাই স্কুল ছেড়ে চলে আসি। যদিও আমার পিতা মিধাত উদ্দিন আহমেদ বি.এ. বি. টি. টেকনিক্যাল কারণে পরের বছর ১৯৬৬ সালে অন্যকে দায়িত্ব দিয়ে আমিন মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নেন। আমার বাবা আর মামাকে বলা হতো “যুগলবন্দী ” (সম্পর্কে আমার বাবা ছিলেন চাচাতো ভাই আবার ভগ্নিপতিও) । তাহলে বলা যায় সেটাও ছিল মুসলিমলীগের অপশাসনের বিরুদ্ধে জলজ্যান্ত প্রতিবাদ। যা শুরু করেছিলেন প্রগতিশীল রাজনীতির ধারক, বাহক ঐতিহ্যবাহী মকিমাবাদ মিয়া পরিবার অর্থাৎ আমাদের পরিবার।

আওয়ামীলীগের প্রচারণা চলছে।
মনে পড়ে আইয়ুব খান ও ফাতেমা জিন্নার নির্বাচন গোলাপ ফুল আর হারিকেন প্রতীকের।বিরোধী দলের প্রার্থী ফাতেমা জিন্না ( কায়দে আজম জিন্নাহ সাহেবের বোন) মুসলিমলীগ না করে আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন, তাই লাকসাম আসবেন জনসভায় ভাষন দিতে। আসতে দেরি হচ্ছিল তাই চাঁদপুরের শিক্ষক থেকে আওয়ামীলীগ রাজনীতিবিদ মিজানুর রহমান চৌধুরী প্রায় টানা দশ ঘন্টা বক্তৃতা দিয়েছিলেন বলে শুনেছি মানুষ ধরে রাখতে। আওয়ামীলীগের ছয় দফা, আর ছাত্রলীগের এগার দফা। ৬৯ সালের গনঅভ্যুত্থান। তারপর ইয়াহিয়ার কাছে ক্ষমতা। এখানে হাজিগঞ্জ আওয়ামী লীগ রাজনীতির দুই ব্যক্তির বিশেষ ভাবে উল্লেখ করতে হয় যারা নির্বাচন না করেও দলের জন্য স্বাধীনতা পূর্ব সময়ে অবদান রেখেছেন তার একজন হাজিগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের এককালীন সভাপতি জনাব সুজাত আলী মুন্সী এবং অন্যজন কাজিরগাও পাটাওয়ারী বাড়ির আবিদ পাটোয়ারী সাহেব যার বাড়িতে বঙ্গবন্ধু সহ অনেক কেন্দ্রীয় নেতা আথিতেয়তা গ্রহণ করেছিলেন বলে শুনেছি যদিও ঐ দুই জনকেই দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। পাটোয়ারী ও মুন্সী পরিবারের সাথে আমাদের মিয়া পরিবারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠতা ছিলসত্তরের নির্বাচনে জাতীয় পরিষদে হাজিগঞ্জ থেকে আওয়ামী লীগের নমিনেশন চেয়েছিলেন জনপ্রিয় নেতা কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি জনাব আবদুর রব এবং প্রাদেশিক পরিষদের জন্য হাজিগঞ্জ বলাখাল মুন্সী বাড়ির তখনকার অরাজনৈতিক ব্যক্তি এল,এম, এফ. ডাক্তার আব্দুস সাত্তার সাহেবকে দিয়ে নমিনেশন দরখাস্ত করান ( উল্লেখ্য ডাক্তার সাত্তার সাহেব আমাদের পারিবারিক আত্মীয় এবং বর্তমান কারিগরি ঘর নাম খ্যাত বিল্ডিংএ চেম্বার করতেন)। যেহেতু কয়েকটি থানা নিয়ে জাতীয় পরিষদের আসন নির্ধারিত ছিল, তাই ফরিদগঞ্জের জনাব অলিউল্লাহ নওজয়ান নমিনেশন প্রাপ্ত হন। যেহেতু রব সাহেব শুধু মাত্র জাতীয় পরিষদের নমিনেশন চেয়েছিলেন তাই তিনি তারই নির্বাচিত ব্যক্তির পক্ষে দলের আনুগত্য অনুযায়ী কাজ করতে হয়েছিল সমগ্র চাদপুর মহকুমা তথা কুমিল্লা জেলার সকল প্রার্থীর পক্ষে। ৭০ ঘূর্ণিঝড়, নির্বাচন। আর সেই ৭০ সালের নিবার্চনে আওয়ামীলীগের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রাপ্তি। পশ্চিমা গোষ্ঠীর পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালীদের কাছে পুরো পাকিস্তানের শাসন ভার দিতে অনীহা। উল্টো শুরু হল নিরস্ত্র বাঙালির উপর আক্রমণ গনহত্যা, লুন্ঠন, নির্যাতন। বাঁচার তাগিদে মাতৃভূমির সম্মান রক্ষার্থে হাতে তুলে নিল যা ছিল তাই। শুরু হলো প্রতিরোধ আর প্রতিশোধ।

স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ। আমার বড় ভাই মোঃ খায়রুল আহছান, বি, এম, কলিমূল্লাহ, সাহেব বাড়ির সাজু ভাই প্রমূখ প্রথমেই হাজীগঞ্জের হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন, এখানে উল্লেখ্য যে রাজাকার কমান্ডার টোরাগরের বাচ্চু প্রথমদিকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় গ্রীন লাইব্রেরীতে শুনতে যেতাম স্বাধীনতা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র। শুনেছিলাম মেজর জিয়া কর্তৃক ২৭ মার্চ প্রথম নিজেকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ঘোষণা এবং পরে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। শব্দ খুব ক্ষীণ শুনাচ্ছিল। এলাকার শান্তি কমিটির ও রাজাকার সদস্যদের কারণে আদর্শ পিতা ও শিক্ষক মরহুম মিধাত উদ্দিন আহমেদকে( মেন্দু মিয়া স্যার) হারানো। যিনি এলাকার কলকাতা বিশ্ব বিদ্যালয়ের প্রথমদিকের একজন স্নাতক ছিলেন। তাই বলা যায় বুদ্ধিজীবী নির্যাতন, হত্যা, যুদ্ধ শুরু থেকে হানাদার বাহিনীর নীল নকশার মধ্যে ছিল। অনেক রক্ত, জীবন, আর সম্পদের বিনিময়ে পেলাম স্বাধীন দেশ এবং লাল সবুজের পতাকা। সবুজ সংঘ গঠন, বালিকা বিদ্যালয় পূর্ণ গঠন । ঐতিহ্যবাহী কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে ভর্তি হলাম। তখন জাসদ রাজনীতির নাম শুনলাম। রুস্তম আলী ছিলেন ভিক্টোরিয়া কলেজের ভিপি, নাজমুল হাসান পাখি , বাকি, বাবু শিব নারায়ণ দাস ইত্যাদি অনেক নাম শুনা। অল্প সময়ে নিউ হোষ্টেলের ত্রিশ নম্বর রুমে আমি, রশিদ( সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান) তার চাচাতো ভাই জামাল থাকতাম। হাজীগঞ্জের অনেকেই আমাদের সাথে ভর্তি হয়ে ইন্টারমিডিয়েট পড়েছিল। সক্রিয় রাজনীতি কেউ করিনি।
তবে ৭৩ সালের নির্বাচনে। স্বাধীনতা পরবর্তী প্রথম নির্বাচন। বঙ্গবন্ধু চাচ্ছিলেন মানুষের শাসন প্রতিষ্ঠায় জনগণের নতুন রায় নিতে। এখন আর প্রাদেশিক পরিষদ নেই একমাত্র জাতীয় সংসদ। তাই জনাব আবদুর রব এবার আবার দলের নমিনেশন চাইলেন যেহেতু মুক্তিযুদ্ধ সংগঠকদের মধ্যে জেলার মধ্যে উনি ছিলেন অন্যতম। বেশিরভাগ সময় দেশের ভিতরে অবস্থান করে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। কিন্তু এবারও বঙ্গবন্ধু উনাকে নমিনেশন দেননি। অথচ জনাব ডাঃ আবদুল সাত্তার সাহেব মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর নিজস্ব সমর্থক নিয়ে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। তাদের মধ্যে অনেকেই এখন আওয়ামী লীগের ঝান্ডা উড়িয়ে সুবিধাজনক অবস্থায় আছেন। ফলশ্রুতিতে ত্যাগী এই নেতার মনে ক্ষোভ সৃষ্টি হল এবং উনি দল থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার লক্ষে পদত্যাগ পত্র নিয়ে বঙ্গবন্ধুর কাছে গেলেন। বঙ্গবন্ধু বুঝতে পারলেন এই ত্যাগী নেতার মনের ক্ষোভ। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন ” কি রে রব তোর হাতে পিছনে এটা কি? নমিনেশন দেইনি বলে পদত্যাগ পত্র নিয়ে আসলি? বঙ্গবন্ধু অত্যন্ত স্নেহ ভরা কন্ঠে আক্ষেপ করে বললেন তুইও আমাকে ভুল বুঝলি। আরে তোদের যদি আমি এমপি বানাই, তাহলে আমি দল চালাবো কাকে দিয়ে? আমার যে দলে তোদের মত সৎ ত্যাগী ও আদর্শ নেতার খুব দরকার। আসল কাজ যে এখনো বাকি।” রব সাহেব উনার কথায় মুগ্ধ ও তৃপ্ত হয়ে ফিরে এসে দলের নমিনি সাত্তার সাহেবের জন্য কাজ করলেন। বঙ্গবন্ধু যখন উনার দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দিয়ে বাকশাল ও প্রতিটি নতুন জেলায় গর্ভনর প্রথা চালু করলেন, তখন বঙ্গবন্ধু নিজে সেই দলের প্রধান হয়ে প্রতিটি জেলায় একজন সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্ব দিয়ে দল গঠন করলেন। চাঁদপুর জেলায় সেই দায়িত্ব দিলেন ত্যাগী নেতা জনাব আবদুর রবকে, জেলা গভর্নর নিয়োগ দিলেন কচুয়ার আব্দুল আউয়াল সাহেবকে। উল্লেখ্য রব সাহেবকে বঙ্গবন্ধু দলের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি হিসাবে ততকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নে পাঠালেন অভিজ্ঞতার জন্য এবং সরকারি রুপালী ব্যাংকের পরিচালক নিয়োগ দিলেন। সেই সময়ই হাজিগঞ্জের এই ব্যাংকের শাখা হয় এবং এলাকার অনেক মানুষ নিয়োগ লাভ করেন। বঙ্গবন্ধুর আরেকটি কোমল হৃদয়ের কথা বিশেষ ভাবে উল্লেখ করতে হয় হাজিগঞ্জের পাকিস্তান আমলের আওয়ামী লীগ নেতা জনাব ডাঃ ফজলুল হক ( পাকিস্তান ডাক্তার নামে খ্যাত ছিলেন) অসুস্থ হয়ে সমস্ত শরীর অবশ অর্থাৎ প্যারালাইজড হয়ে গেলে হেলিকপ্টার পাঠিয়ে চিকিৎসা করানোর জন্য ঢাকা নিয়ে যান এবং ওষুধ আমদানির লাইসেন্স প্রদান করেন। ( আমার বন্ধু মুক্তিযোদ্ধা দুলালের ও সাবেক পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হেলালের পিতা )। মনে পড়ে কোদাল মার্কা প্রতীক কলিমূল্লাহ ভূইয়া মামাকে (এখানে উল্লেখ্য যে হাজীগঞ্জে বসবাসরত দুইজন জনাব আবদুর রব মিয়া এবং জনাব বি,এম,কলিমূল্লাহ জগন্নাথ কলেজে পড়াকালীন ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে অংশ নিয়ে ছিলেন) ভোট দিয়েছিলাম ফক্স গায়ে নিয়ে চাদর মূড়ি দিয়ে আমিন মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে। যদিও আওয়ামী লীগ প্রার্থী ডাক্তার আবদুস সাত্তার সাহেবের কাছে হারা ছিল নিশ্চিত। চলে আসা ১৯৭৪ শেষে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ে ভর্তি অর্থনীতি বিভাগে। ছাত্র থাকাকালীন বঙ্গবন্ধুর ভাষন শুনতে দুই একবার রেসকোর্স / সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাওয়া। শুনতাম কি সাবলীল ভাবে সত্য বলে যাওয়া শুনলে মনে হতো কবিতা পাঠ। মানুষ আকর্ষণের এক অপরিসীম ক্ষমতা ছিল বঙ্গবন্ধুর। জনতা পিন পতন নিস্তব্ধতায় শুনে যেতেন কবির মোহনীয় কবিতা।

১৯৭৫ সালের ১৪ আগষ্ট দুপুরে শেষে ক্লাশ করে ফেরার পথে দেখলাম শেখ কামালের সাথে অন্য ছাত্রলীগ নেতাদের নিয়ে পরের দিনের আয়োজনে ব্যাস্ত। অল্প সময়ে দেখা শেখ কামালকে কখনো দেখিনি কোনো উচ্চ বাচ্য করতে। সমাজতত্ত্ব বা সোজিওলজি বিভাগে পড়তেন একই বিভাগের ক্রীড়াবিদ সুলতানাকে ভালবাসতেন। বিরোধী রাজনীতি করতেন মেধাবী ছাত্র জহির সাদেক, পারভেজ ভাই প্রমুখ। আমার চাচাত ভাই আক্তার ভাই ঐ বিভাগে পড়তেন। দেখলাম সুদিয়ার আলী আশ্ররাফ দুলাল, হাটিলার সৈয়দ ভাই, হারুন ভাই ( ভাইস চেয়ারম্যান), চাঁদপুরের সালাম, সোনা আকন্দের ভাতিজা আহছান আকন্দ প্রমুখকে যদিও যতটুকু মনে পড়ে কাউকে সক্রিয় রাজনীতি করতে দেখিনি বা জানিনা। শুধুমাত্র হাজীগঞ্জ টঙ্গীপারের হাবিবুল্লাহ চৌধুরী ( জাসদ নেতা) এবং হোসেন ইমাম হায়দারকে ( জাসদ ছাত্রলীগ জগন্নাথ কলেজ) পরবর্তীতে উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, মধুর ক্যানটিনের দক্ষিণে আম গাছের নীচে বসা দেখতাম। আমার সাথে ভর্তি হলো হাজীগঞ্জ ওরিয়ান্টাল লাইব্রেরি ও হাফিজ আর্ট প্রেসের মালিকদের একজনের সন্তান গোলাম হোসেন ( সাবেক সচিব, কচুয়ার সন্তান যদিও তাদের পরিবারের ব্যবসা, লেখাপড়া ছিল হাজীগঞ্জে) এবং মকিমাবাদ গ্রামের স্কুল বন্ধু মনির হোসেন (পরবর্তীতে অধ্যাপক এবং ব্যাংক অফিসার) কেউই কিন্তু সক্রিয় রাজনীতি করতাম না বা করিনি। ( যদিও এখন অনেকেই তাদের জীবনের অনেক মিথ্যা কিছু লিখেন) আমি থাকতাম বড় বোনের বাসায় (বলাখাল বেতিয়াপাড়া মোন্দার বাড়ির মান্নান কোম্পানি আমার দুলাভাই) ধানমন্ডি দুই নম্বর সড়কে লেক পাড়ে শেষ বাড়িতে ( যেখানে প্রায় প্রতি সন্ধ্যায় আড্ডা দিতে আসতেন মন্ত্রী টাংগাইলের আবদুল মান্নান, মিজানুর রহমান চৌধুরী( তথ্য ও বেতার প্রতিমন্ত্রী , মনিভূষণ মজুমদার, বাবু মনরঞ্জন ধর, সোহরাব হোসেন, কে, এম, ওবায়দুর রহমান প্রমূখ । পিছনে লেক আর পরিস্কার দেখা যেত বঙ্গবন্ধুর ৩২ সড়ক। আমার বোন আর দুলাভাই যতদুর মনে পড়ে লন্ডনে গিয়েছিলেন। আমি আমার ভাগীনা খোকন উপরের তলায় লেক পাড়ের দিকের রুমে শুয়ে নীচ তলায় আমার মেজদা আজাদ ভাই ও খালাতো ভাই হিরা ভাই( লিপনের বড় ভাই) ছিলেন। হঠাৎ শেষ রাত ভোরের দিকে প্রচন্ড গুলির শব্দ। ঘুমে ভেঙে আমরা হতবাক। বললাম খোকনকে নীচে শুয়ে পড়। কিছুক্ষণ এভাবে থাকার পর ফোন বেজে উঠল এলিফেন্ট রোডের ডেল্টা ফার্নিচারের মালিক রহমতুল্লাহ সাহেবের দুলাভাইর কথা জিজ্ঞাসা করেই জানাল বঙ্গবন্ধুর বাড়ির দিক থেকে শব্দ। এমন সময় আপাদের বাবুর্চি আবদুল পাশের সারভেন্ট কোয়ার্টার থেকে দৌড়ে এসে বলল মামা তাড়াতাড়ি রেডিও শুনেন শেখ মুজিবকে মেরে ফেলেছে। আমি দৌড়ে গেলাম নীচ তলায় যে রুমে থাকতাম রেডিও অন করলাম আর হীরাদা, মেজদাকে জানালাম উনারা সহ রেডিওতে মেজর ডালিমের ঘোষণা “স্বৈরাচার মুজিবকে হত্যা করা হয়েছে”। চোখের সামনে ভেসে উঠলো বঙ্গবন্ধুর গড়া ছাত্রলীগের তুখোড় ছাত্রনেতা এবং মুক্তিযোদ্ধা একটি গ্রুফ দ্বারা গঠিত জাসদ, গণবাহিনী যার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন গোপনে সিরাজুল আলম খান ( যাকে পরবর্তীতে শেরাটন হোটেলে বসে বিয়ার খেতে দেখিছি), প্রকাশ্যে মেজর অবঃ জলিল, আসম আবদুর রব, শাহজাহান সিরাজ, গণবাহিনীতে ছিল কর্নেল অবঃ তাহের, ইনু, প্রমুখ ছাত্রলীগ জাসদের নেতৃত্ব ছিল, আফম মাহবুবুল হক, মান্না, আক্তারুজ্জামান প্রমুখের। ভার‍তের হাইকমিশনার সমর সেনকে হাইজ্যাকের চেষ্টা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী মনসুর আলীর বাসভবন ঘেরাও গুলি, থানা,ব্যাংক লুট, এমপি হত্যা,পাটের গুদামে আগুন বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের নামে। জন্মস্থান হাজীগঞ্জের অনেকেই এই দলের সাথে জড়িত ছিল যদিও সবাই এখন তা ভুলে ত্যাগী আওয়ামীলীগ নেতা ও সুবিধাভোগী। আমি সাইকেল চালিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় যেতাম। ভোরে ইচ্ছা হল ঢাকা শহরকে একটু দেখি আসি। সাইকেল চেপে একাকী বেড়িয়ে পড়া ঢাকার পথে দেখতে আর চিনতে নতুন স্বাধীন রক্তেভেজা বাংলাদেশকে। দেখে খুবই অবাক হলাম একজন নেতা, ব্যক্তি, যার জীবন যৌবন দিয়ে বাংলার মানুষের মুক্তি চেয়েছেন, বিসর্জন দিয়েছেন সুখ, শান্তি যে ব্যক্তি ব্যতীত একটি স্বাধীন দেশের জন্ম হতো না তাকে স্বপরিবারে হত্যা করা হলো। অথচ প্রতিবাদ নেই, প্রতিরোধ নেই, দুঃখ, কান্না, আর্তনাদ নেই। কোথায় উনার গড়া ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামীলীগ? সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নাই কোন প্রতিবাদী মিছিল। নিঃস্তব্ধতার চাদরে মোড়ানো রাজধানী ঢাকা রাস্তা ঘাট, প্রকৃতি। প্রথম মনে ভাবতাম সংবাদটি হয়তো মিথ্যা। তিনি আছেন, থাকবেন, আসবেন বজ্র কন্ঠে বলে উঠবেন ভাইয়েরা আমার, এই বাংলার মানুষের মুখে হাসি ফুটানো যে এখনো বাকী। তা পূর্ণ না করে যে চলে যেতে পারেন না। রেডিও (ইতিমধ্যে নাম বেতার থেকে রেডিও) বাংলাদেশ থেকে তিন বাহিনীর প্রধানের নতুন সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ। সত্যি বলতে গেলে আমার সমস্ত শরীরে মাথা থেকে পা পর্যন্ত বিদ্যুৎ বয়ে গেল। নিজেকে এই জাতির একজন হিসাবে জলজ্যান্ত বেঈমান মনে হল। (চলবে …)

(সম্পুর্ন নিজস্ব ভাবনা থেকে যতটুকু স্মৃতিতে আছে তা এই প্রজন্মের জন্য কিছু মানুষের অনুরোধে সত্য তুলে ধরলাম। যেহেতু লেখক নই, ধারাবাহিকতায় অভাব ও ভুল থাকা স্বাভাবিক তাই এসব ক্ষমার চোখে দেখার অনুরোধ জানাচ্ছি)।

 

Comments are closed.

More News Of This Category